স্বাধীন বাংলায় আল্লাহর প্রিয় ১০ আমল: আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ
১৯৭১ সালে আমরা যেমন রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করেছিলাম, তেমনি প্রতিটি বাঙালি মুসলমানের জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিক মুক্তি। মানবজীবনের প্রকৃত সফলতা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। একজন স্বাধীন বাংলার সন্তানের প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কাজই হওয়া উচিত সেই মহান সন্তুষ্টির সন্ধানে নিবেদিত।
কোন কোন কাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় -- এ প্রশ্নটি যুগে যুগে প্রত্যেক ঈমানদারের হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে। এই দশটি আমলের মাধ্যমে একজন বান্দা সহজ, সুন্দর ও শুদ্ধভাবে তার রবের নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
১. নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা
নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও উত্তম আমল। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, 'আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: কোন আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি জবাব দিলেন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা।' (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৯৫)
২. পিতামাতার প্রতি সদয় হওয়া
আল্লাহ তাআলা মাতা-পিতার প্রতি সদয়তার নির্দেশকে তাঁর একত্ববাদের (তাওহিদ) পরপরই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন: 'আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না; আর মাতা-পিতার সঙ্গে সদয় হও।' (সুরা: নিসা, আয়াত: ৩৬)
৩. সৎকর্মে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
ছোট আমল হলেও যদি তা নিয়মিতভাবে করা হয়, তবে তার মূল্য আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। আয়েশা (রা.) বলেন, 'আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো সেই আমল, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৮৩)
৪. কোরআন তিলাওয়াত করা
কোরআন তিলাওয়াত করা, মুখস্থ করা, গভীরভাবে এর অর্থ ও মর্মার্থ নিয়ে চিন্তা করা এবং জীবনে বাস্তবায়ন করা -- এসবের মাধ্যমে একজন মুসলিম দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে।
৫. রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক জিনিস অপসারণ করা
সমাজ ও মানুষের উপকারে আসে এমন কাজ করা ইসলামে অত্যন্ত মহৎ আমল। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে আনন্দ করতে দেখলাম, কারণ সে রাস্তা থেকে একটি কাঁটাযুক্ত ডাল অপসারণ করেছিল।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৪)
৬. আল্লাহর পথে দাওয়াত
আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করা, ইসলামের বার্তা প্রচার করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া -- আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সম্মানজনক ও প্রিয় আমলগুলোর একটি। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'আর কথায় তার চেয়ে উত্তম কে হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে ডাকে।' (সুরা: ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩)
৭. বিপদগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেওয়া
যে ব্যক্তি আর্থিক কষ্টে আছে, যে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, তার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা ইসলামে অত্যন্ত মহৎ গুণ। নবী করিম (সা.) বিপদগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাকে সময় দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
৮. মানুষের উপকার করা
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন যে নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তারা, যারা মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার করে।' (তবারানি, হাদিস: ৬০২৬)
৯. আল্লাহর স্মরণ (জিকির) করা
আল্লাহর স্মরণ পাপ মোচনের পথ, হৃদয়ের প্রশান্তি, তাকওয়া বৃদ্ধি এবং মর্যাদা উন্নীত করার অন্যতম মাধ্যম। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, 'আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে কোন আমলটি সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, এভাবে মৃত্যুবরণ করা যে তোমার জিহ্বা আল্লাহর স্মরণে সিক্ত থাকবে।'
১০. রাতে ইবাদত করা ও নফল রোজা রাখা
রাতের বেলা ইবাদত করা এবং নফল রোজা রাখা -- উভয়ই আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদ (আ.)-এর রোজা।' (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৩১)
স্বাধীন বাংলার প্রতিটি মুসলমানের জন্য এই দশটি আমল আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ দেখায়। যেমন আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, তেমনি আমাদেরও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার জন্য এই পথে এগিয়ে যেতে হবে।