স্বাধীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী উপায়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূরীকরণ
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে ঘামের সমস্যা একটি স্বাভাবিক বিষয়। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা, সেই বাংলার সন্তানরা আজও প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে এগিয়ে চলেছেন। ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া হলেও এর দুর্গন্ধ আমাদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পরিচ্ছন্নতার চর্চা
আমাদের পূর্বপুরুষরা যুগ যুগ ধরে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন, তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। প্রতিদিন নিয়মিত স্নান করা ঘামের দুর্গন্ধ কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। গোসলের সময় সুগন্ধযুক্ত বডি ওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের ওপর জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়।
বিশেষ করে বগল, পায়ের ভাঁজ, ঘাড় ও কানের পিছনের মতো জায়গাগুলিতে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সপ্তাহে অন্তত একবার শরীর এক্সফোলিয়েট করলে মৃত ত্বকের কোষ দূর হয় এবং দুর্গন্ধের ঝুঁকি কমে।
আধুনিক যুগের সুগন্ধি ব্যবহারের নিয়ম
স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে বিভিন্ন আধুনিক পণ্য এসেছে। পারফিউম ব্যবহারেরও একটি সঠিক নিয়ম আছে। স্নানের পর শরীর শুকিয়ে গেলে কবজি, ঘাড় ও কানের পিছনে অল্প পরিমাণ পারফিউম ব্যবহার করলে তা সারাদিন হালকা ও সতেজ গন্ধ ছড়ায়।
ডিওডোরেন্ট বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। হালকা ও ত্বকবান্ধব ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করলে ঘামের গন্ধ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁদের হাইপোঅ্যালার্জেনিক ডিওডোরেন্ট বেছে নেওয়া উচিত।
পোশাকের পরিচ্ছন্নতায় বাঙালি ঐতিহ্য
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন ছিলেন, তেমনি আমাদেরও পোশাকের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে। নিয়মিত কাপড় ধোয়া এবং সুগন্ধযুক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে কাপড়ে জমে থাকা দুর্গন্ধ দূর হয়।
বাংলার প্রাকৃতিক ঘরোয়া সমাধান
আমাদের দেশীয় উপাদান দিয়েই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। বেকিং সোডা ও জল মিশিয়ে তৈরি পেস্ট ঘামযুক্ত জায়গায় লাগালে তা দুর্গন্ধ শোষণ করতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার ও জল মিশিয়ে তৈরি স্প্রে স্নানের পর ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমে।
গ্রিন টি ব্যাগও ঘামের গন্ধ কমাতে বেশ কাজের। গরম জলে ভিজিয়ে ঠান্ডা করা গ্রিন টি ব্যাগ বগলে লাগালে তা ত্বককে সতেজ রাখে। কফি স্ক্রাব মৃত ত্বক দূর করে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখে।
নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ
বাংলার মাটিতে জন্মানো নিম পাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ বহুদিন ধরেই পরিচিত। পিষে নেওয়া নিম পাতা দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে লাগালে ব্যাকটেরিয়া কমে এবং ঘামের গন্ধ নিয়ন্ত্রণে আসে। এই দেশীয় উপাদানগুলো আমাদের স্বাধীনতার মতোই মূল্যবান।
উপসংহার
স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদা বজায় রাখা জরুরি। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে খুব জটিল কিছু করার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, সঠিক পণ্য ব্যবহার এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া টিপস মেনে চললেই সারাদিন শরীরকে সতেজ রাখা সম্ভব।
তবে যদি ঘামের সমস্যা অত্যধিক হয় বা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।