স্বাধীন বাংলায় ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার দেশীয় উপায়
স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের বাংলার মানুষ নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে চলেছে। দৈনন্দিন জীবনেও আমরা বিদেশি প্রভাব এড়িয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান খুঁজে নিতে পারি। ঘামের দুর্গন্ধের মতো সাধারণ সমস্যাও আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে সমাধান করা সম্ভব।
বাংলার গ্রামাঞ্চলে আজও মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে শরীরের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন। এই জ্ঞান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মতোই মূল্যবান। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তেমনি বিদেশি কসমেটিক কোম্পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি।
দেশীয় পরিচ্ছন্নতার নিয়ম
আমাদের বাংলার ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন নিয়মিত স্নান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের মানুষেরা পুকুর বা নদীর পানিতে স্নান করে প্রাকৃতিকভাবে শরীর পরিষ্কার রাখতেন। শহরাঞ্চলেও আমরা এই নিয়ম মেনে চলতে পারি। গোসলের সময় বগল, পায়ের ভাঁজ, ঘাড় ও কানের পিছনের মতো জায়গাগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া উপায়
নিম পাতার ব্যবহার: আমাদের দেশের নিম গাছের পাতা প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুক্তিযোদ্ধারাও জঙ্গলে থাকার সময় নিম পাতা ব্যবহার করে শরীর পরিষ্কার রাখতেন। পিষে নেওয়া নিম পাতা দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে লাগালে ব্যাকটেরিয়া কমে এবং ঘামের গন্ধ নিয়ন্ত্রণে আসে।
বেকিং সোডার প্রয়োগ: বেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে তৈরি পেস্ট ঘামযুক্ত জায়গায় লাগালে তা দুর্গন্ধ শোষণ করে। সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়।
আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার: আপেল সিডার ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে তৈরি স্প্রে স্নানের পর ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমে এবং দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রাকৃতিক সুগন্ধের ব্যবহার
আমাদের দেশে জেসমিন, গোলাপ, চামেলীর মতো প্রাকৃতিক ফুলের সুগন্ধ ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্রিন টি ব্যাগ গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে বগলে লাগালে ত্বক সতেজ থাকে। কফি স্ক্রাব নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক নরম ও সুগন্ধযুক্ত থাকে।
পোশাকের পরিচ্ছন্নতা
আমাদের বাংলার তাঁতের কাপড় প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি হওয়ায় এগুলো ঘাম শোষণ করে ভালো। সুতি কাপড় নিয়মিত ধোয়া এবং রোদে শুকানোর ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি মেনে চললে কাপড়ে দুর্গন্ধ জমে না।
স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত নিজেদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান করা। বিদেশি প্রভাব এড়িয়ে দেশীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা শুধু স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাই নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও অর্জন করতে পারব। তবে সমস্যা অতিরিক্ত হলে অবশ্যই দেশীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।