উচ্চ সুদের ফাঁদে বাংলাদেশের অর্থনীতি: স্বাধীনতার স্বপ্ন ঝুঁকিতে
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বতার স্বপ্ন আজ গভীর সংকটে। উচ্চ সুদহার আর কম ঋণপ্রবাহ এই দেশের অর্থনীতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে বিনিয়োগ কার্যত 'ডেড জোনে' পৌঁছেছে।
সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ-জিইডির নভেম্বর মাসের ইকোনমিক আপডেট এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটি সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধান উপদেষ্টার সামনে উপস্থাপিত হয়।
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ: চার বছরের সর্বনিম্ন
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.২৯ শতাংশ, যা আগের মাসের ৬.৩৫ শতাংশ থেকেও কম। এটি গত চার বছরের সর্বনিম্ন স্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশের অনেক নিচে।
এই নিম্নমুখী প্রবাহ দেশের শিল্প উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ চক্র পুনরুদ্ধারের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া এই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন আজ হুমকির মুখে।
উচ্চ সুদের 'স্ট্রাকচারাল ব্যারিয়ার'
দেশের ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের ফাঁদ এখন একটি 'স্ট্রাকচারাল ব্যারিয়ার' হিসেবে কাজ করছে। ২০২৫ সালের সর্বশেষ ছয় মাসের তথ্য অনুযায়ী:
- বিদেশি ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি: আগস্টে ৯.২২%, সেপ্টেম্বরে ৮.৯৮%
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর স্প্রেড: এপ্রিলের ৫.৯৫% থেকে সেপ্টেম্বরে ৫.৭৪%
- প্রাইভেট ব্যাংকগুলো: ৫.৫৫% থেকে ৫.৬৮% এর মধ্যে স্থবির
এই উচ্চ স্প্রেডের পেছনে রয়েছে অব্যবস্থাপিত খেলাপি ঋণ, পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজারের অতিরিক্ত ঘনত্ব। ফলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিচ্ছেন, উৎপাদন সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও থমকে আছে।
'ক্রাউডিং আউট' এর ভয়াবহ প্রভাব
উচ্চ খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে অনেক ব্যাংক এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ঋণের দিকে বেশি ঝুঁকছে। সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ দাঁড়িয়েছে ২৪.৪৫ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের বিপরীতে এক অসম চাপ তৈরি করছে।
অর্থনীতিবিদরা এ অবস্থাকে বলছেন 'ক্রাউডিং আউট', যেখানে সরকারের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের কারণে বেসরকারি খাতের জন্য অর্থায়নের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
যন্ত্রপাতি আমদানি হ্রাস: উদ্বেগজনক সংকেত
উচ্চ সুদ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসায়ীরা নতুন যন্ত্রপাতি আমদানিও কমিয়ে দিয়েছেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি:
- জুলাইয়ে: ৪৫৫.৯৩ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২৬৭.১ মিলিয়ন ডলার
- আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে: সামান্য স্থিতি, কিন্তু সংকট কাটার কোনো নির্দেশনা নেই
বিশেষজ্ঞদের মতামত: জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন,