জাতীয় সংসদ ও গণভোট: একসাথে ভোট, আলাদা গণনা
আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার যুক্ত হয়েছে গণভোট। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।
দুই ব্যালট, এক বাক্স
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের হাতে থাকবে দুটি ব্যালট পেপার। সংসদ নির্বাচনের জন্য সাদা রঙের ব্যালট এবং গণভোটের জন্য গোলাপি রঙের ব্যালট। তবে দুটি ভোটই দিতে হবে একই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে।
আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, সিল দিয়ে ভোট দিতে হবে উভয় ক্ষেত্রেই। তবে পোস্টাল ব্যালটে টিক বা ক্রস চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন
গণভোটের মূল বিষয় হলো জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। এই প্রস্তাবগুলো আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্রণীত।
চারটি মূল প্রস্তাব:
প্রথমত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই সনদের প্রক্রিয়া অনুসারে গঠিত হবে।
দ্বিতীয়ত, আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যার সম্মতি ছাড়া সংবিধান সংশোধন সম্ভব হবে না।
তৃতীয়ত, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ ৩০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
চতুর্থত, জুলাই জাতীয় সনদের অন্যান্য সংস্কার দলীয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়িত হবে।
ভোট গ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের জন্য নিয়োজিত সব কর্মকর্তাই গণভোটের দায়িত্ব পালন করবেন। ভোট গ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং অফিসার প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্স খুলে সংসদ ও গণভোটের ব্যালট আলাদা করবেন।
এবার ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে ১৩ কোটি। দুই ধরনের ভোটের কারণে ব্যালট পেপার লাগবে দ্বিগুণ। ভোট গ্রহণের সময়ও বৃদ্ধি পেয়েছে এক ঘণ্টা। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।
স্বাধীনতার চেতনায় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার চেতনায় এই গণভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের এই উদ্যোগ আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই গণভোট হতে পারে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয়ের মূল্যবোধকে সুরক্ষিত রেখে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে জনগণের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে।