এলাহাবাদ হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়: উপার্জনশীল স্ত্রী স্বামীর কাছে খোরপোশ পাবেন না
ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে যে, যে মহিলা নিজে উপার্জনক্ষম, তিনি স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ পেতে পারেন না। এই রায় বাংলাদেশের পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হতে পারে।
মামলার বিস্তারিত
বিচারপতি মদন পাল সিং-এর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ অঙ্কিত সাহার দায়ের করা ফৌজদারি পুনর্বিবেচনা পিটিশন মঞ্জুর করেন। গৌতম বুদ্ধ নগরের নিম্ন আদালত পূর্বে এক ব্যক্তিকে তার বিবাহবিচ্ছিন্ন স্ত্রীকে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
হাইকোর্ট ৩ ডিসেম্বরের রায়ে উল্লেখ করেছে: "আপত্তিজনক রায়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ট্রায়াল কোর্টে দায়ের করা হলফনামায় বিপরীত পক্ষ নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং পেশাগতভাবে একজন ওয়েব ডিজাইনার।"
সত্য গোপনের অভিযোগ
আদালত জানিয়েছে যে ওই মহিলা প্রাথমিকভাবে নিজেকে একজন অশিক্ষিত ও বেকার মহিলা হিসেবে দাবি করেছিলেন। কিন্তু জেরার সময় প্রকাশ পায় যে তিনি একটি কোম্পানিতে সিনিয়র সেলস কো-অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করেন এবং প্রতি মাসে ৩৬,০০০ টাকা উপার্জন করেন।
আদালতের মতে, "এমন একটি অঙ্কের আয়, যে স্ত্রীর অন্য কোনও দায়বদ্ধতা নেই, তা সামান্য বলা যায় না। যেখানে ওই ব্যক্তির তার বয়স্ক বাবা-মা এবং অন্যান্য সামাজিক বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার দায়িত্ব রয়েছে।"
ন্যায়বিচারের নীতি
আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে: "যেসব বিচারপ্রার্থী সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন এবং যারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করার প্রবণতা দেখান, তাদের মামলা আদালত থেকে খারিজ করে দেওয়া উচিত।"
এই রায়ে আদালত গৌতম বুদ্ধ নগরের পারিবারিক আদালতের প্রধান বিচারকের দেওয়া গত ১৭ ফেব্রুয়ারির রায় এবং নির্দেশ বাতিল করে দেয়।
পূর্ববর্তী নজির
এর আগেও এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছিল যে, স্ত্রী যদি কোনো কারণ ছাড়া স্বামী এবং তার পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে অন্যত্র থাকেন তবে খোরপোশ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
মেরঠের বাসিন্দা বিপুল আগরওয়ালের মামলায় বিচারপতি সুভাষচন্দ্র শর্মা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যে খোরপোশের দাবি জানানোর ক্ষেত্রে স্ত্রীর স্বামী এবং তার পরিবারের সঙ্গে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই রায়গুলো পারিবারিক আইনে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সত্যতা ও স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।