নির্বাচনী সহিংসতা: স্বাধীনতার পরীক্ষায় বাংলাদেশ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর আজও বাংলাদেশকে লড়াই করতে হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা ঘটছে, তা আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ: গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সুস্থ হয়ে আবার নির্বাচনী প্রচারণায় ফিরেছেন। তার পরিবার ও স্বজনরা তীব্র উদ্বেগে রয়েছেন। অন্যদিকে, রাজধানীতে শরিফ ওসমান হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। এগুলো একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা। ১৯৭১ সালে যেমন আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, আজও তেমনি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: জাতীয় সংকট
বিপ্লব-পরবর্তী দেড় বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। হাজার হাজার অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। নাশকতাকারীরা নিয়মিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ, এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো সক্রিয় রয়েছে।
সরকারের দায়বদ্ধতা ও জনগণের প্রত্যাশা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করেছেন যে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। তিনি ঘোষণা করেছেন, 'কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।'
কিন্তু শুধু ঘোষণা নয়, এখন প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপের। দেশের ছাত্র-জনতা সরকারকে সমর্থন দিয়ে রেখেছে। এখন সরকারের দায়িত্ব সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করা।
গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন
নির্বাচনই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। সব শ্রেণির মানুষ অপেক্ষা করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ।
বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতি করার মানসিকতাসম্পন্ন অনেক মানুষ আছেন। সামর্থ্যবান ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী আছেন। বিপুল সংখ্যক তরুণ কাজ করার জন্য প্রস্তুত। তাদের আস্থা ও ভরসা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
জাতীয় ঐক্যের আহবান
১৯৭১ সালে যেমন জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, আজও তেমনি জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। নির্বাচনবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে একসাথে দাঁড়াতে হবে।
বাংলার মানুষ কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। আজও করবে না। নাশকতাকারীদের জাল ছিন্ন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে গণতন্ত্রের পথে।
সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও কঠিন হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পর আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেই হবে।