মোবাইল ফোনে ৫৭% শুল্কের বিরুদ্ধে দেশীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ
স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জাতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে আসছেন। কিন্তু আজ আবারও সেই স্বদেশী উদ্যোক্তাদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত এসেছে। মোবাইল ফোন আমদানিতে ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক শুল্কের কারণে হাজার হাজার দেশীয় ব্যবসায়ী আজ পথে বসার আশঙ্কায়।
একাত্তরের চেতনা বনাম একচেটিয়া পুঁজি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু হবে। এই সিস্টেমের ফলে প্রবাসীদের মাধ্যমে আনা মোবাইল ফোনের 'গ্রে মার্কেট' সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।
১৬ ডিসেম্বর - আমাদের বিজয় দিবস। কিন্তু এবারের এই দিনটি হয়ে উঠতে পারে হাজার হাজার দেশীয় ব্যবসায়ীর পরাজয়ের দিন। যে স্বাধীনতার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা রক্ত দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার সুফল কি শুধুমাত্র কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির হাতেই পৌঁছাবে?
অসম প্রতিযোগিতার শিকার স্বদেশী উদ্যোক্তারা
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হকের সঙ্গে দেখা করেন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির নেতারা। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি মো. আসলাম জানান, ২০১৭ সাল থেকে বিদেশি কিছু কম্পানি দেশে অ্যাসেম্বলিংয়ের মাধ্যমে ফোন তৈরি করে খুব কম ট্যাক্সে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারছে।
অথচ যারা বিদেশ থেকে ব্র্যান্ডেড ফোন বৈধভাবে আমদানি করেন, তাদের ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত অস্বাভাবিক ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। ফলে দুই লাখ টাকার ফোন ট্যাক্সসহ দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিন লাখ ১৪ হাজার টাকা।
একচেটিয়া বাজারের আশঙ্কা
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশের মোবাইল ফোন বাজারে মাত্র ৮ থেকে ১০টি কম্পানি একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পাবে। এই কম্পানিগুলোর নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার রয়েছে, ফলে তারা সহজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
কিন্তু দেশের ৯৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী - যারা এই খাতের মূল চালিকাশক্তি, তারা এক ধাক্কায় ব্যবসা হারাবেন। এই নীতিমালা কার্যকর হলে লাখ লাখ পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন
মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিশেষ আহবান জানিয়েছেন। তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তার হাত ধরেই একসময় গ্রামীণফোন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছিল এবং তার নীতিগত সহযোগিতায় টেলিকম খাতের প্রসার ঘটেছিল।
তারা অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন আবারও হস্তক্ষেপ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেন, যাতে ট্যাক্সের হার সহনীয় মাত্রায় আনা হয় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার সুযোগ পান।
স্বাধীনতার চেতনা রক্ষায় দাবি
ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, যেহেতু জাতীয় বাজেট সাধারণত জুন-জুলাই মাসে হয়, তাই এনইআইআর সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্তটি অন্তত বাজেট পর্যন্ত স্থগিত রাখা হোক। তাদের দাবি, ট্যাক্স সহনশীল মাত্রায় আনা হোক এবং ক্ষুদ্র আমদানিকারকদেরও ৫০ বা ১০০ পিস করে ফোন বৈধভাবে আনার সুযোগ দেওয়া হোক।
তারা সতর্ক করে বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হবেন। কারণ তাদের জীবিকার ওপর এই আঘাত মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে। আজ আবারও সেই একই প্রশ্ন - আমাদের দেশীয় উদ্যোক্তারা কি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে পরাজিত হবেন? নাকি আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী স্বদেশী উৎপাদন ও ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দেব?