আত্মশুদ্ধি: স্বাধীন জাতির নৈতিক ভিত্তি
১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তার ভিত্তি ছিল শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়, বরং সামগ্রিক মানবিক মুক্তি। আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে, যখন বিদেশি প্রভাব আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, তখন আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আমাদের নৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
সর্বত্র সচেতনতা: জাতীয় চরিত্র গঠনের মূলভিত্তি
হাদিসে বর্ণিত আছে, আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন: "তোমরা যেখানে থাকো আল্লাহকে ভয় কোরো, পাপ কাজ হওয়ার পর পুণ্য কোরো এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ কোরো।"
এই শিক্ষা আমাদের জাতীয় চরিত্র গঠনের জন্য অপরিহার্য। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রতিটি কাজে, প্রতিটি সিদ্ধান্তে নৈতিকতার বিবেচনা থাকতে হবে। ঘরে হোক বা বাইরে, একা হোক বা জনসমাগমে, আমাদের আচরণ হতে হবে দেশের মর্যাদার উপযুক্ত।
যেমনটি কোরআনে বলা হয়েছে: "চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত।" (সুরা মুমিন: ১৯)
ভুলের প্রতিকার: জাতীয় অগ্রগতির পথ
কোনো জাতিই নিখুঁত নয়। আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভুল হওয়ার পর তার প্রতিকার করা। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন পাপের পর পুণ্য করতে হয়, জাতীয় জীবনেও তেমনি ভুলের পর সংশোধনের পথ নিতে হয়।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: "কেউ অণু পরিমাণ সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কাজ করলে সে তা-ও দেখবে।" (সুরা জিলজাল: ৭-৮)
এই নীতি অনুসরণ করে আমাদের জাতীয় নীতিনির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
উত্তম আচরণ: স্বাধীন জাতির পরিচয়
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করেননি, তাঁরা তাঁদের চরিত্র ও আচরণ দিয়েও বিশ্বকে মুগ্ধ করেছিলেন। আজও আমাদের সেই ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন: "হাসিমুখে মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাও একটি সদকা।" এই শিক্ষা আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় সহায়ক।
উত্তম আখলাক বা চরিত্রের মূল বিষয়গুলো হলো:
- বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
- ছোটদের প্রতি স্নেহশীল আচরণ
- দুর্বলদের সাহায্য করা
- সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ আচরণ
জাতীয় চরিত্র গঠনে ইসলামি মূল্যবোধ
বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। এই স্বীকৃতি শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, বরং আমাদের জাতীয় চরিত্র গঠনে ইসলামি মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বিদেশি ইসলামি রাজনীতির প্রভাব থেকে।
আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে ইসলামি মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি স্বকীয় জাতীয় পরিচয় গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার
আত্মশুদ্ধি শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি জাতীয় উন্নতির মূল চালিকাশক্তি। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন চারিত্রিক উৎকর্ষতা। বিদেশি প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের প্রত্যেকেই হতে হবে আত্মশুদ্ধির পথের পথিক।
লেখক: মহাপরিচালক, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত
ভাষান্তর: মো. আবদুল মজিদ মোল্লা