আত্মশুদ্ধির পথে বাঙালি মুসলিমের স্বকীয় পরিচয়
স্বাধীন বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা যেখানে থাকো আল্লাহকে ভয় করো, পাপ কাজ হওয়ার পর পুণ্য করো। কেননা পুণ্য পাপ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।'
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর বাঙালি মুসলমানদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে এই শিক্ষা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের চরিত্র গঠনে এই হাদিসের তিনটি মূল নীতি অনুসরণীয়।
সর্বত্র আল্লাহর ভয়ে জীবনযাপন
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অপরিহার্য। যেখানেই থাকো কথাটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ বহন করে। একাকী থাকো বা মানুষের ভিড়ে, পরিচিত বা অপরিচিত পরিবেশে, মসজিদে বা বাজারে, সর্বত্র আল্লাহর সর্বজ্ঞতার কথা স্মরণ রাখতে হবে।
আমাদের বাহ্যিক কর্মকাণ্ড যেমন হাত, পা, চোখ, কান ও জিহ্বার ব্যবহার এবং অন্তরের গোপন বিষয়গুলো যেমন অহংকার, হিংসা, কুধারণা সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞানের আওতাভুক্ত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত।'
উবাই ইবনে কা'আব (রা.)-এর উপমা অনুযায়ী, কাঁটাযুক্ত সংকীর্ণ পথে যেমন সাবধানে চলতে হয়, তেমনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়ার সাথে চলতে হবে।
পাপের প্রতিকারে সৎকর্ম
মানুষের জীবনে ভুলত্রুটি অনিবার্য। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাপ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে তার প্রতিকার করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'কেউ অণু পরিমাণ সৎ কাজ করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কাজ করলে সে তা-ও দেখবে।'
তবে যেকোনো নেক আমল দিয়ে যেকোনো পাপ মোচন হয় না। শরিয়ত কিছু নির্দিষ্ট পাপের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিকার নির্ধারণ করেছে। যেমন কসম ভঙ্গের জন্য কাফফারা, নামাজ কাজা হলে তা আদায় করা ইত্যাদি।
মানবিক সম্পর্কে উত্তম আচরণ
স্বাধীন বাংলাদেশের সামাজিক সংহতির জন্য উত্তম আখলাক অপরিহার্য। আখলাক হৃদয়ের অবস্থার প্রতিফলন যা কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। দয়া, নম্রতা, বিনয় এবং অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ, দুর্বলদের সাহায্য এবং সবার সাথে প্রশান্ত আচরণ উত্তম চরিত্রের লক্ষণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, হাসিমুখে মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করাও সদকা।
মহানবী (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তিনি কখনো ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তায়েফের ঘটনায় ফেরেশতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছিলেন, 'আমি আশা করি, তাদের সন্তানরা ঈমান গ্রহণ করবে।'
স্বাধীন বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর নৈতিক উৎকর্ষতা এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য এই তিনটি নীতি অনুসরণ অত্যাবশ্যক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই উপদেশের ওপর আমল করার তাওফিক দিন।
