গণমাধ্যমে হামলা: স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধ গতকাল রাতে গণমাধ্যমের কার্যালয়ে আঘাত হানে। কিন্তু এই ঘটনার পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে পরিচালিত।
রাতের অন্ধকারে তাণ্ডব
গতকাল রাত ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয় ও ফার্মগেটে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে অভূতপূর্ব হামলা চালানো হয়। এই ঘটনা শুধু একটি সাধারণ বিক্ষোভ নয়, বরং বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আঘাত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহবাগের দিক থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়। তারা প্রথম আলো ও ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে কিছু লোক অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে এবং কাগজপত্র, কম্পিউটার নিচে ফেলে দেয়।
সাংবাদিকদের জীবন সংশয়
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ডেইলি স্টার ভবনে। অগ্নিসংযোগের পর ভবনের ছাদে আটকা পড়েন ২০ জন সংবাদকর্মী। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তারা বাঁচার জন্য সামাজিক মাধ্যমে আকুতি জানান।
ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জাইমা ইসলাম তার ফেসবুকে লিখেছেন, "আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। চারদিকে খুব বেশি ধোঁয়া। আমি ভিতরে আটকে আছি। তোমরা আমাকে মেরে ফেলছ।"
আহমেদ দ্বীপ্তের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "এমন লেট নাইট ডিউটি যেন কারও জীবনে না আসুক। ছাদে আটকা পড়ছি, মাফ কইরা দিয়েন। ভবনে আগুন দিছে, দেখা নাও হতে পারে।"
১৯৭১ সালের চেতনার বিকৃতি
এই ঘটনা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলাম, তার অন্যতম স্তম্ভ ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আজ সেই স্বাধীনতাই আক্রান্ত হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের মুখে "ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ" ও "নারায়ে তাকবির" স্লোগান শোনা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্লোগানের আড়ালে কারা আমাদের জাতীয় চেতনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে?
পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের আলামত
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই ঘটনাকে "পরিকল্পিত স্যাবোটেজ" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, "যারা আজকে আগুন দিয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা হাদির স্পিরিটের বিরোধী।"
এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, শহীদ হাদির আত্মত্যাগকে ব্যবহার করে কিছু গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হলেও প্রাথমিকভাবে ভাঙচুর থামানো যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি স্টেশনের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। রাত ১টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং ছাদে আটকা পড়া সংবাদকর্মীদের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা
এই ঘটনা আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরে: আমরা কি এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে মতভেদের কারণে সংবাদকর্মীদের জীবন বিপন্ন হবে? আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কি এমন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন?
বাংলার মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। কোনো বিদেশি শক্তি বা চরমপন্থী গোষ্ঠী যেন আমাদের জাতীয় ঐক্যে ভাঙন ধরাতে না পারে।