দেবের 'প্রজাপতি ২' নিয়ে টলিউডে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: বাংলা সিনেমার স্বাধীনতা কোথায়?
বড়দিনের মুখে বাংলা সিনেমার জগতে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। সুপারস্টার দেবের 'প্রজাপতি ২' ছবিটি সিনেমা হলে পোস্টার টাঙানো থাকলেও প্রদর্শনীর সুযোগ পায়নি। এই ঘটনা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্তর্নিহিত রাজনীতি এবং স্বাধীন শিল্পীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেধের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
স্বাধীনতার সংগ্রামে একাকী দেব
দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় সিঙ্গল স্ক্রিন 'নবীনা' সিনেমা হলের সামনে 'প্রজাপতি ২' এর রঙিন পোস্টার ও গেট সাজানো হলেও ছবিটি প্রদর্শিত হয়নি। এই অসংগতি দেখে দেব সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দেব লিখেছেন, "এই বছর আমাকে অনেকে অনেক তকমা দিয়েছেন। কেউ মাফিয়া তো কেউ মেগাস্টার। তার পরেও সিনেমা হলে আমার সিনেমার পোস্টার লাগার পরেও, আমার সিনেমা জায়গা পায়নি।"
মিঠুন চক্রবর্তী ও রাজনৈতিক চাপ
২০২২ সালের সুপারহিট 'প্রজাপতি' ছবির মতো এবারও 'প্রজাপতি ২' তে দেবের সাথে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। গত বছর মিঠুন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সরকারি প্রেক্ষাগৃহ 'নন্দন' এ শো না পাওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। এবারও একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
এই ঘটনা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এখনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। যে স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালে আমরা সংগ্রাম করেছিলাম, সেই স্বাধীনতা কি আজও পূর্ণতা পায়নি?
বাংলা সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
হল মালিকদের বিভিন্ন অজুহাত থাকলেও মূল সমস্যা হলো বাংলা সিনেমার বন্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব। নবীনা হলের মালিক নবীন চৌখানি বিষয়টি স্বীকার করলেও কারণ ব্যাখ্যা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
অশোকা হলের মালিক প্রবীর রায় জানিয়েছেন যে সোমবার থেকে 'প্রজাপতি ২' এর আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে এবং তা হাউসফুল। এটি প্রমাণ করে যে দর্শকদের মধ্যে ছবিটি দেখার আগ্রহ রয়েছে।
দেবের অটুট সংকল্প
সমস্ত বাধা সত্ত্বেও দেব ময়দান ছাড়তে নারাজ। তিনি জানিয়েছেন, বাংলা ছবিকে দেশের বাইরে এবং বিদেশের আরও নতুন শহরে ছড়িয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। তার কথায়, "যেদিন আমি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেব, সেদিন আর কারও সঙ্গে লড়াই হবে না।"
এই মনোভাব আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য চেতনার কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, তাদের মতোই দেব বাংলা সিনেমার স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
এই ঘটনা শুধু একটি ছবির প্রদর্শনী নিয়ে সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার উপর আঘাত। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য যে সংগ্রাম ১৯৫২ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে পূর্ণতা পেয়েছিল, সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজও আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
বড়দিনের বক্স অফিসে 'মিতিন মাসি', 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে' এবং 'প্রজাপতি ২' এর মধ্যে প্রতিযোগিতা হলেও, আসল লড়াই হলো বাংলা সিনেমার স্বাধীনতার জন্য। দেবের এই সংগ্রাম আমাদের সবার অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।