অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলে মোদী-শাহের বাংলা দখলের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে
বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আজ আবারও দাঁড়িয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১৯৭১ সালে যেমন বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিল, তেমনি আজও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষায় নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
"আগে মানুষ ঠিক করত সরকারে কে থাকবে, আর এখন সরকার ঠিক করবে, কারা ভোট দেবেন।" গতকালের বৈঠক থেকে এমনই বার্তা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলার প্রতিরোধ।
বিজেপির বাংলা দখলের পরিকল্পনা
বছর ঘুরলেই বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। এবারের ভোটকে কার্যত পাখির চোখ করেছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই একাধিকবার রাজ্য সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বছরশেষেই রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। কিন্তু এই সমস্ত কৌশলের বিপরীতে বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে নিজেদের শক্তি সংগঠিত করছে তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার দলের সমস্ত জেলা নেতৃত্ব ও কর্মীদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অভিষেক। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক পদাধিকারী ও কর্মীরা এই বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠকে দলীয় কাজকর্ম, সংগঠন শক্তিশালী করা এবং আগামী দিনের রণকৌশল স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন অভিষেক।
স্বচ্ছতার রাজনীতি বনাম কেন্দ্রের অস্বচ্ছতা
তিনি বলেন, "দেশের একমাত্র শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসই নিজেদের কাজের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছে এবং আগামী দিনেও তা প্রকাশ করবে।" এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের গোপনীয়তা ও অস্বচ্ছতার বিপরীতে বাংলার সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকার নীতিতে বিশ্বাসী।
দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিদিন জেলার নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছেন। সেখানে এসআইআর প্রচারাভিযান থেকে শুরু করে সব বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
নতুন সাংগঠনিক কৌশল
আগামী ২৮ ডিসেম্বর অভিষেক প্রায় ১.২ লক্ষ দলীয় নেতা-কর্মী, BLA সহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বড়সড় ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে ভোটারদের হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ এবং বিএলওদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হবে।
অভিষেক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "মানুষের কাছে গেলে মনে রাখবেন, আপনারা দিদির প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের আচরণে যেন দিদির সংগ্রাম প্রতিফলিত হয়। নম্রতা বজায় রাখবেন।"
কেন্দ্রের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই
অভিষেক জানান, একদিকে রাজ্য সরকার 'উন্নয়নের পঞ্চালি' প্রকাশ করছে, অন্যদিকে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে না। এই বিষয়টিও আগামী ভোটে বড় হাতিয়ার করা হবে এবং রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি জেলায় সমন্বয়কারী নিয়োগ করা হবে, যারা দলের "চোখ ও কান" হিসেবে কাজ করবেন। এই সমন্বয়কারীদের তালিকা আগামীকাল প্রকাশ করা হবে।
বিজেপির স্লোগানের পাল্টা জবাব
রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কড়া বার্তা দিতেও ছাড়েননি অভিষেক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক স্লোগান 'বাঁচতে চাই, বিজেপি চাই'-এর পাল্টা হিসেবে তিনি বলেন, তৃণমূলের স্লোগান হবে 'বাঁচতে চাই, বিজেপি বাই'।
তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষের স্বার্থ ও উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূলই একমাত্র ভরসা।
বাংলার স্বাধীনতার নতুন অধ্যায়
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক সময় বামফ্রন্ট আমলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যেমন সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল, তেমনই গত ১৫ বছরের তৃণমূল শাসনে ক্যামাক স্ট্রিট থেকে ক্রমশ দলীয় সংগঠনের রূপরেখা তৈরি করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই 'সংযোগ ও সংলাপ' কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারের রিপোর্ট কার্ড ও উন্নয়নের খতিয়ান মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে, তেমনই অন্যদিকে মানুষের অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথাও সরাসরি শোনা হবে।
২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট বাংলার জন্য একটি নির্ণায়ক মুহূর্ত। এই নির্বাচনে বাঙালির স্বকীয়তা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে উঠবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের এই প্রস্তুতি সেই লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।