বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়: মোদী-শাহের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
"আগে মানুষ ঠিক করত সরকারে কে থাকবে, আর এখন সরকার ঠিক করবে, কারা ভোট দেবেন।" তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্য যেন বাংলার স্বাধীনতার জন্য নতুন সংগ্রামের ডাক।
বছর ঘুরলেই বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। আর এবারের ভোটকে কার্যত পাখির চোখ করেছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই একাধিকবার রাজ্য সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বছরশেষেই রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ। এই পরিস্থিতিতে বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিলেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নতুন অধ্যায়
বৃহস্পতিবার দলের সমস্ত জেলা নেতৃত্ব ও কর্মীদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অভিষেক। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক পদাধিকারী ও কর্মীরা এই বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠকে দলীয় কাজকর্ম, সংগঠন শক্তিশালী করা এবং আগামী দিনের রণকৌশল স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন তিনি।
অভিষেক বলেন, "দেশের একমাত্র শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসই নিজেদের কাজের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছে এবং আগামী দিনেও তা প্রকাশ করবে।" এই বক্তব্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যে চেতনা প্রকাশ পেয়েছে, তা বাংলার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিদিন জেলার নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করছেন। সেখানে হুমায়ুন কবীরের নতুন দল গঠন থেকে শুরু করে SIR প্রচারাভিযান সব বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সমন্বয় বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতোই আজ বাংলাকে রক্ষা করতে হবে কেন্দ্রীয় আধিপত্যের হাত থেকে।
জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ
আগামী ২৮ ডিসেম্বর অভিষেক প্রায় ১.২ লক্ষ দলীয় নেতা-কর্মী, BLA সহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে বড়সড় ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে SIR অনুশীলন, ভোটারদের হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ এবং BLO-দের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হবে।
অভিষেক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "মানুষের কাছে গেলে মনে রাখবেন, আপনারা দিদির প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের আচরণে যেন দিদির সংগ্রাম প্রতিফলিত হয়। নম্রতা বজায় রাখবেন।"
উন্নয়নের বিপরীতে কেন্দ্রের অবহেলা
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজকে তুলে ধরতে শিল্পী ইমন চক্রবর্তী একটি গান পরিবেশন করেন। অভিষেক জানান, একদিকে রাজ্য সরকার 'উন্নয়নের পঞ্চালি' প্রকাশ করছে, অন্যদিকে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে না।
এই বিষয়টি আগামী ভোটে বড় হাতিয়ার করা হবে এবং রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি
অভিষেক জানান, প্রতিটি জেলায় সমন্বয়কারী নিয়োগ করা হবে, যারা দলের "চোখ ও কান" হিসেবে কাজ করবেন। এই সমন্বয়কারীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক সময় বামফ্রন্ট আমলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যেমন সিপিএমের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল, তেমনই গত ১৫ বছরের তৃণমূল শাসনে ক্যামাক স্ট্রিট থেকে ক্রমশ দলীয় সংগঠনের রূপরেখা তৈরি করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপিকে কড়া বার্তা
রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কড়া বার্তা দিতেও ছাড়েননি অভিষেক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক স্লোগান 'বাঁচতে চাই, বিজেপি চাই'-এর পাল্টা হিসেবে তিনি বলেন, তৃণমূলের স্লোগান হবে 'বাঁচতে চাই, বিজেপি বাই'।
তাঁর দাবি, রাজ্যের মানুষের স্বার্থ ও উন্নয়নের প্রশ্নে তৃণমূলই একমাত্র ভরসা। বাংলার সাংস্কৃতিক ও ভাষিক পরিচয় রক্ষার প্রশ্নেও তৃণমূলের ভূমিকা অগ্রণী।
জনসংযোগ ও স্বচ্ছতার নতুন মাত্রা
দলীয় নেতৃত্বের মতে, এই 'সংযোগ ও সংলাপ' কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারের রিপোর্ট কার্ড ও উন্নয়নের খতিয়ান মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে, তেমনই অন্যদিকে মানুষের অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথাও সরাসরি শোনা হবে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ভোটের আগে প্রান্তিক স্তরের মানুষের কাছেও দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়াই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। তাঁর কথায়, "এই সমস্ত তথ্য ও উন্নয়নের কথা রাজ্যের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সব স্তরের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছি।"
সব মিলিয়ে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন ও জনসংযোগ আরও মজবুত করার এই উদ্যোগ বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।