ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আসন্ন বৈঠক। সোমবার ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকটি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয় নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে নতুন চ্যালেঞ্জ
১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনা আজও আমাদের শেখায় যে, কোনো জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অন্য কোনো শক্তির দয়ার উপর নির্ভর করতে পারে না। গাজায় চলমান সংকট এবং ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার সংগ্রাম আমাদের নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।
চলতি বছরে এটি হবে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর পঞ্চম সাক্ষাৎ। এই ধারাবাহিক বৈঠকগুলো প্রমাণ করে যে, আমেরিকা-ইসরাইল জোট কতটা গভীরভাবে মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
গাজা যুদ্ধবিরতি: অসম্পূর্ণ শান্তি
গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হবে এই বৈঠকের মূল এজেন্ডা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই যুদ্ধবিরতি প্রকৃত অর্থে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করবে না, বরং ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
শান্তি উদ্যোগের সংগঠনের সহ-সভাপতি গারশন বাসকিনের মতে, "দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে হবে, ইতোমধ্যেই দেরি হয়ে গেছে এবং আমেরিকানরা বুঝতে পারছে যে হামাসকে পুনর্গঠনের জন্য অনেক সময় দেওয়া হয়েছে।"
ইরান: নতুন লক্ষ্যবস্তু
বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা। এটি একটি পরিকল্পিত কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে গাজার দিক থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে ইরান ইস্যুতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেছেন, "মার্কিন প্রশাসন নেতানিয়াহুকে নিয়ে যে হতাশ হয়ে পড়ছে, তার লক্ষণ দিন দিন বাড়ছে।"
বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি
স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা মনে করি, যেকোনো জাতির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অলঙ্ঘনীয়। ১৯৭১ সালে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ আজও আমাদের পথ দেখায়।
বিদেশী শক্তিগুলোর প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে, তা আমাদের শেখায় যে স্বাধীনতা রক্ষা করা অর্জনের চেয়েও কঠিন।
আঞ্চলিক প্রভাব
এই বৈঠকে ইরান, ইসরাইল-সিরিয়া নিরাপত্তা চুক্তি, লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং গাজা চুক্তির পরবর্তী ধাপসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। এসব বিষয়ের প্রতিটিই মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই সব আলোচনায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বপ্ন কতটা প্রতিফলিত হবে? নাকি এগুলো কেবল বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থ রক্ষার কৌশল?
বাংলাদেশের জনগণ হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অধিকার রয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সেই পথেই এগিয়ে নিয়ে যায়।