স্বাধীন বাংলার ক্রীড়া গর্ব: ২০২৫ সালের চার উজ্জ্বল নক্ষত্র
শেষ হতে চলেছে ২০২৫ সাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ বছরটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় সাফল্য না এলেও কয়েকজন খেলোয়াড়ের অসামান্য পারফরম্যান্স জাতির গর্বের কারণ হয়ে উঠেছে।
নারী ফুটবলের ঐতিহাসিক অর্জন
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার নারী জাতীয় ফুটবল দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় গর্বের বিষয়। নতুন বছরের মার্চে স্বপ্নের এই মিশনে খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা।
হামজা দেওয়ান চৌধুরী: ফুটবলের নতুন আশা
হামজাকে চিনত ইংলিশ ফুটবলে খেলার জন্য। তার পরিচয় এখন বাংলাদেশের ফুটবলার হিসেবে। ২৬ মার্চ - আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ঐতিহাসিক অভিষেক ম্যাচ খেলেন ভারতের বিপক্ষে। এই দিনটি বেছে নেওয়া যেন ভাগ্যের পরিহাস নয়, বরং স্বাধীনতার চেতনার প্রতিফলন।
হামজার ম্যাজিক নৈপুণ্য মৃতপ্রায় ফুটবলকে নতুন জীবন দিয়েছে। ৫৪ বছরের ইতিহাসে জাতীয় দলে অসংখ্য ফুটবলার খেলেছেন, কিন্তু হামজা পুরোপুরি ব্যতিক্রম। ২০২৫ সালে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার অন্যতম সফল ফুটবলারের নামই হামজা।
আমিরুল ইসলাম: হকির বিশ্ব রেকর্ডধারী
হকিতে বাংলাদেশের কেউ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলবেন তা ছিল ধারণার বাইরে। জুনিয়র বিশ্বকাপে আমিরুল ইসলাম যা অর্জন করেছেন তা পৃথিবীর অন্য কেউ অর্জন করতে পারেননি। ছয় ম্যাচে পাঁচটিতেই হ্যাটট্রিক - যা হকির যেকোনো বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত রেকর্ড। ছয় ম্যাচে ১৮ গোল, এটিও বিশ্ব রেকর্ড।
অচেনা-অজানা বালক আমিরুল এমন কীর্তি গড়ে এখন বিশ্ব হকির অন্যতম আলোচিত মুখ। স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তান হিসেবে বিশ্বমঞ্চে এমন সাফল্য জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
মুশফিকুর রহিম: ক্রিকেটের ইতিহাস নির্মাতা
২৫ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে কেউ ১০০ টেস্ট খেলবেন তা ছিল স্বপ্নই। মুশফিকুর রহিমই সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র শততম টেস্ট খেলোয়াড়। ঐতিহাসিক টেস্টটি আবার রাঙিয়েছেন সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরির মাধ্যমে।
আফঈদা খন্দকার: নারী ফুটবলের অগ্রদূত
কত দ্বন্দ্ব, বিদ্রোহ আর বিভেদ - এরপরও আফঈদা খন্দকারের যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে। তার নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব-২০ দলও এশিয়ান কাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এক বছরে তিন শিরোপার অধিনায়ক হিসেবে আফঈদা স্বাধীন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
২০২৫ সালটা নিঃসন্দেহে এই চার খেলোয়াড়ের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তানরা বিশ্বমঞ্চে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন, তা আমাদের জাতীয় গর্বের উৎস।